খলিলুর রহমান:
১২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি: তারিখে তারেক রহমান রাজনৈতিক দর্শন চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (বর্তমান নাম: কাণ্ডারী)-এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নকালে ও ১/১১-এর ভয়াবহ পটভূমিতে জন্ম নেওয়া এই সংগঠনটি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে প্রতিকূল স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চর্চা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে নিরলস কাজ করে চলেছে। সংগঠনটির তারেক রহমান রাজনৈতিক দর্শন চর্চা ও “গবেষণা কেন্দ্র” থেকে “কাণ্ডারী”তে নামান্তর এক ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন, যা এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আলমগীর নূর-এর দূরদর্শী নেতৃত্বের পরিচায়ক।
‘কাণ্ডারী’ নামকরণটি ইঙ্গিত দেয় যে সংগঠনটি এখন শুধু গবেষণামূলক কাজ নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাজনীতি ও সুশাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, আইন ও বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম সংস্কার এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি নীতিনির্ধারণী ও নেতৃত্বস্থানীয় জাতীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
আলমগীর নূর: সংগ্রাম ও ত্যাগের এক প্রতিচ্ছবি//
চট্টগ্রামের বাকলিয়ার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান জনাব আলমগীর নূর একাধারে সাবেক ছাত্রনেতা, সাংবাদিক, ও একজন প্রথিতযশা সমাজসেবক। বর্তমানে তিনি জাতীয় শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক মানবকণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি (জিআরইউ)-এর সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন (নাপসা)-এর কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
রাজনৈতিক ও পারিবারিক উত্তরাধিকার
আলমগীর নূর-এর রাজনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত সুদৃঢ়। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ সওদাগর ছিলেন প্রচারবিমুখ অথচ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি ছিলেন তৎকালীন শহর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল চট্টগ্রামের সাবেক ইসলামিয়া হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিক। তাঁর বাড়িতেই ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম পারিবারিক আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।
মরহুম নূর মোহাম্মদ সওদাগর বিএনপি প্রতিষ্ঠার জন্য শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক অবদান এবং ত্যাগের ক্ষেত্রে সমসাময়িক অনেকের ঊর্ধ্বে ছিলেন। শহীদ জিয়ার সাথে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাল খনন কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন।
নির্যাতন ও অবিচলতা:
আলমগীর নূরের আপোসহীন পথচলা//
আলমগীর নূর এবং তাঁর পরিবার বিএনপি’র আদর্শে অবিচল থাকার কারণে দীর্ঘকাল ধরে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ১/১১’র পটভূমি থেকে শুরু করে ২৪’র গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির একজন ব্যাপক কারানির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৬ সাল থেকে ২৪’র গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শুধু বিএনপি করার ‘অপরাধে’ আলমগীর নূর ও তাঁর বড় ভাই আলী ইউসুফকে বারবার গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি করার জেরে তাঁর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া হোটেল দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর বন্ধ করে দেয়।
২০১৩ সালে বসতভিটা জবরদখল:
বিএনপি করার জেরে তাঁর বসতভিটা স্বৈরাচারের দোসর
সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা (বর্তমানে ঐ সন্ত্রাসীরা বিএনপির পতাকাতলে কিছু নেতার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে) জবরদখল করে নেয়, যা আজও পুনরুদ্ধার হয়নি।
এতো প্রতিকূলতার মাঝেও আলমগীর নূর জিয়া পরিবারের পক্ষে অনড় থেকে ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। দলের অভ্যন্তরের কিছু অংশের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তাঁর এই ত্যাগ ও অবদান তাঁকে একজন আদর্শিক নেতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নগরীর কাণ্ডারী:
সামাজিক আন্দোলনের পুরোধা
রাজনীতির পাশাপাশি, আলমগীর নূর একজন প্রথম সারির সামাজিক আন্দোলনকারী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। গত ২০ বছরে তাঁর উল্লেখযোগ্য সামাজিক অবদানসমূহ হলো:
কর্ণফুলী নদী রক্ষা ও খাল পুনরুদ্ধার:
চট্টগ্রামব্যাপী কর্ণফুলী নদী রক্ষা, নগরীর বিলুপ্ত হওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে তাঁর আন্দোলন ছিল অগ্রগণ্য।
বাকলিয়ার উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা:
বাকলিয়ার ইসহাকের পুল, আব্দুল লতিফ হাট পুল, মাস্টার পুল পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের সামাজিক আন্দোলনে তাঁর অবদান অসামান্য।
বির্জাখাল পুনরুদ্ধার: ভূমিদস্যুদের কবল থেকে বাকলিয়ার বির্জাখাল পুনরুদ্ধার এবং অবৈধভাবে নির্মিত সেতু অপসারণে তাঁর ব্যক্তিগত ও দুঃসাহসিক উদ্যোগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নামকরণের স্থপতি:
সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের সার্বিক সহযোগিতায় কল্পলোক আবাসিক এর নাম বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক নামকরণের একমাত্র উদ্যোক্তা ও কারিগর ছিলেন আলমগীর নূর।
আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন চসিক মেয়র মনজুরুল আলম মঞ্জু সাহেব ও তৎকালীন প্যানেল মেয়র হাসনির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম স্টেডিয়াম নামের পরিবর্তে বাকলিয়া স্টেডিয়াম নামকরণের বাস্তবায়ন করেন এ আলমগীর নূর।
বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী, দক্ষ সংগঠক, ও আপসহীন ব্যক্তিত্ব আলমগীর নূর বর্তমানে চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় (কোতোয়ালী-বাকলিয়া-চকবাজার আংশিক) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র একজন সম্ভাবনাময়ী মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাঁর মতো ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্ভাবনাময়ী নেতার যথাযথ মূল্যায়ন আগামীর রাজনীতি এবং বৃহত্তর বাকলিয়া তথা চট্টগ্রামের জন্য অপরিহার্য।।