Sonaly Khobor

মনিরুজ্জামান মনির :

“আরে ভাই রাখেন আপনার সংবাদ, দুদককেই আমি পকেটে রাখি আর আপনি আসছেন নিউজ করার জন্য। এসব নিউজে কোন কিছুই করতে পেরেছেন। আপনি আপনার অনুসন্ধানী নিউজ করতে থাকেন তাতে আমার কিছুই করতে পারবেন না।
আপনি কি সকল ক্ষমতার ঊর্ধ্বে নাকি? এমন প্রশ্ন করতেই উত্তর আসে ক্ষমতার কি দেখেছেন, আমি চাইলেই আপনার পত্রিকা বন্ধ করে দিতে পারি। আপনারা সাংবাদিকরা যে চাঁদাবাজি করেন তা আমি ভালো করেই জানি। একটা সাংবাদিকের বাচ্চাও ভালো না, সবাইকেই চিনি।” কথাগুলো ফোনের মাধ্যমে বলছিলেন ঢাকা মহনগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলের অসীম ক্ষমতাধর সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) সাদিয়া বিনতে সোলয়মান। যিনি সাংবাদিকতা মত মহান পেশাকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সাংবাদিকদের অপমান করে কথা বলেন। সাংবাদিকগণ অনুসন্ধানী পেশায় কারও মতামত চাইতেই পারে, সেজন্য একজন সংবাদকর্মীর কাছে জাতীর বিবেক বলে জ্ঞাত পুরো সাংবাদিক সমাজকে হেয় করে কথা বলাটা বুজতেই পারা যায় তিনি কতবড় ক্ষমতার অধিকারী। সাদিয়া বিনতে সোলয়মান ঢাকা মহনগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলে এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর থেকেই অফিসটিকে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তিনি তার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে জনসাধারণের কাছ থেকে জমির নামজারি ও জমাভাগ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কতৃর্পক্ষের নজরদারির অভাবে চক্রটি এখন বেপরোয়া। অসীম ক্ষমতাধর সাদিয়া সিন্ডিকেটের ক্ষমতার উৎস খুজে বের করতে গিয়ে জানা যায় ভয়ংকর সব ঘুষ বাণিজ্যের খবর। এসিল্যান্ড সাদিয়া বিনতে সোলয়মান এর সব অনৈতিক কর্মকান্ডের হোতা কানুনগো হাবিবুর ও উমেদার মামুন। এই সিন্ডিকেট এর কাছে সাধারণ ভূমি মালিকগণ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ঘুষখোর এসিল্যান্ড সাদিয়া এতটাই বেপরোয়া যে, কোনভাবেই তার ঘুষ বাণিজ্য থামানো যাচ্ছে না। সেবা দেওয়ার নামে হর হামেশা চলছে সাদিয়া সিন্ডিকেটের ঘুষবাণিজ্য। সাম্প্রতিক জনপ্রিয় অন্তবর্তীকালীন সরকারের শতভাগ ভূমি সেবা নিশ্চিতকরণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও কোন নির্দেশনা তোয়াক্কা করে না চক্রটি। তথ্যসূত্র মতে, দীর্ঘদিন যাবত কোতোয়ালী এসিল্যান্ড অফিসে কর্মরত এই ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও উমেদারদের ঘুষ বাণিজ্য ও টাকা গণনা ওপেন সিক্রেট। সেবা প্রত্যাশিদের অসহায়ত্ব কাজে লাগিয়ে মাসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলে। এরমধ্যে নামজারি, নাম সংশোধনসহ (ক) তালিকা (খ) তালিকা খাস সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি এগুলো গেজেট দেখে (খ) তালিকা সম্পত্তি অবমুক্ত হলেও পাট ভি,পি দেখিয়ে ভুক্তভোগী জনসাধারণের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। অপরদিকে (ক) তালিকার খাস অর্পিত তালিকার দাগ নাম্বার থাকলেও সেটা আংশিক আপত্তি বলে গ্রাহকের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে থাকেন এসিল্যান্ড সাদিয়া চক্র। এই অফিসের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আকড়ে থাকার পাশাপাশি অন্য কোথাও বদলি হলে আবার টাকা পয়সা খরচ করে বদলী হয়ে আসেন কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলে। সাদিয়া সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে বিভাগীয় কমিশনার অফিস ও দুর্নীতি দমন কমিশনও তাদের পকেটে থাকে। যার জন্য ঘুষখোর সাদিয়া এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলে আকড়ে বসে আছে। সাধারণসেবা প্রত্যাশীরাও অতিষ্ট এই সাদিয়া সিন্ডিকেটের জন্য। তাদের চাহিত ঘুষের পরিমান কম দিয়ে কেউ কোন সেবা পেয়েছে তা দুঃস্বপ্নের মত। সাধারন সেবা প্রত্যাশিরা অভিযোগ করেন এত এত অভিযোগের পর বিভাগীয় কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। কোন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে দুর্নীতিবাজ সাদিয়া এখনো বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আসেনি তা কারও জানা নেই।
কোতোয়ালী ভূমি অফিসে ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন কানুনগো হাবিবুর ও উমেদার মামুন। অফিসের ভেতরে কাজ করা একাধিক উমেদারের মাধ্যমে মামুনের কাছে টাকা জমা হয়। জানা যায়, কোতোয়ালী ভূমি অফিসে যত খারিজ হয়, তার বেশির ভাগই কানুনগো হাবিবুর ও উমেদারদের মাধ্যমে হয়। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু করেন অফিসের কর্মচারীরা আর কিছু করেন ব্যক্তি নিজে। এসিল্যান্ড সাদিয়ার ঘুষের রেট বেশি থাকায় লোকজনের কাছ থেকে টাকা বেশি নিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি আবেদনে আবেদনকারী বা তার নিকটজনের মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকে। কতৃর্পক্ষ এই সূত্র ধরে তদন্ত করলেই কোন খারিজ কার মাধ্যমে হচ্ছে ও কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে-বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে। হয়তো কিছু লোক ভয়ে কিছু বলতে চাইবেন না, তবে অনেকে সত্য বলে দিবেন। সাধারন সেবা প্রত্যাশিরা আশা করে সঠিকভাবে তদন্ত করলে দুর্নীতিবাজ এসিল্যান্ড সাদিয়ার সকল ঘুষ বাণিজ্য ও অদৃশ্য ক্ষমতার উৎস বের হয়ে আসবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version