মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির :
ঢাকা মহনগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেল এসিল্যান্ড অফিস বহিরাগত দালালের আখড়ায় পরিণত এমনি অভিযোগ উঠেছ ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের নিকট হতে। দালাল ছাড়া ফাইল লড়ে চড়ে না। ভুক্তভোগীদের দাবি ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এখানেই ভয়। সরিষার ভিতরে ভূতের আসর থাকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বাধাগ্রস্ত হবে না তো আমাদের দেশ? অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নানান দুর্নীতি অপরাধ কর্মের কারণে। অর্থলোভী সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কোতোয়ালী সাদিয়া বিনতে সোলয়মান এর কারণে এমনইটাই হতে যাচ্ছে কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিস। অভিযোগ উঠেছে কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেল মাস্টার রোলে চাকরি করেন যারা তারাই অফিসের লালন পালনকর্তা। এসিল্যান্ড সাদিয়া বিনতে সোলয়মান কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলে যোগদানের পরপরই স্থানীয় ভূমি দস্যু কথিত উমেদার মামুন, শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কানুনগো হাবিবুর রহমান সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন ভয়ঙ্কর এক ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। এইচক্রের কাছে সাধারণ ভুমি মালিকগণ অসহায়। তাদের ধার্যকৃত ঘুষ গুনতে বাধ্য করা হচ্ছে ভূমি মালিকদের। নিরুপায় হয়ে তারা ভূমি সেবা নিতে নিয়মিত ঘুষ প্রদান করছে চক্রটিকে বলে অভিযোগে জানা যায়। সরজমিনে অনুসন্ধান দেখা যায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নানান পেশার মানুষ সাদিয়া বাহিনীর কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছে। আরও দেখা যায় আশেপাশে কিছু দালালের ভূমিকা দেশি রাজহাঁসের মত যেভাবে পায় সেভাবেই খেতে চায়। নিয়ম-কানুন ভুলে গেছে তারা । কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেলটি এসিল্যান্ড সাদিয়ার আশির্বাদে দালালের খপ্পরে ভরে গেছে। ইতিপূর্বে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ এসিল্যান্ড সাদিয়া। সাদিয়ার কর্মকান্ডে ক্ষুন্ন হচ্ছে ভূমি প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি। এসিল্যান্ড সাদিয়ার নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষনীতি, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তোলার খবর প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারনে তা পর্দার আড়ালে রয়ে যায়।
কানুনগো হাবিবুর ও উমেদার মামুন গ্রাহকদের সেবা না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা । অভিযোগ রয়েছে শুধু হাবিবুর বা মামুন নয়, এমন বহু হাবিবুর বা মামুন মনগড়া মত অফিস পরিচালনায় ব্যস্ত যেখানে নেই কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা, রয়েছে শুধু অনিয়ম দুর্নীতি যা দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত এসিল্যান্ড সাদিয়ার আশির্বাদে লতাপাতার মত গজিয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ন এই সার্কেলটিতে। কয়েকজন গ্রাহক প্রতিবেদকে বলেন এসিল্যান্ড সাদিয়া ভালো মনের মানুষী ও সহজ সরলতার মুখোশধারী যিনি নিজস্ব সিন্ডিকেট, একক সেচ্ছাচারীতা ও সর্বোচ্চহারে ঘুষ আদায়ের এক পৈচাশিক আবাসস্থল গড়ে তুলেছেন কোতোয়ালী সার্কেলটিকে।
প্রতিটি দালাল যেন মহাক্ষুধার্ত রাঁজহাস! বিগত বছরগুলোতে কোতোয়ালী এসিল্যান্ড অফিসে এরকম সিন্ডিকেটধারী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখেঁকো একত্রিত হতে পারেনি। সাদিয়া বিনতে সোলায়মান যোগদানের পর থেকে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন এসিল্যান্ড সাদিয়া ও তার দালালচক্র এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী সেবাপ্রত্যাশিদের। এই যদি হয় ভূমি সেবা! মানুষ যাবে কোথায়? কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেল এসিল্যান্ড অফিসে সেবা নিতে আসা অসহায় ভূমি মালিকদের মুখে মুখে শোনা যায় ‘অত্র অফিসের ঘুষখোর এসিল্যান্ড সাদিয়ার নাম। নামজারি নথি বা কেইস বাতিল করে যেন ভবিষ্যতে কোনো জবাবদিহির মখোমুখি না হতে হয় তারও বহু কৌশল তাদের নিজস্ব ফরমেটে তৈরি করা আছে। একটা নির্ভেজাল কাজে তাদের চাহিদা মতো টাকা না পেলে নামজারি বাতিলের সুপারিশ এমন ‘মূল কাগজপত্র বা দলিল প্রদর্শন না করায় অত্র নামজারি না মঞ্জুর করা যেতে পারে’!
অথচ, তাদের সিন্ডিকেট বাহিনির বেলায় এ ধরনের কোনো অযুহাত নেই এবং সারাদিনে দু চারটি মূল দলিল বা মূল কাগজ দেখেছে এরকম নজির খুবই কম। আবার হয়তো কারো কারও নামজারি নথিতে মনগড়াভাবে লিখে রাখে নকশা, পেন্টা লাগবে বিধায় না মঞ্জুরের সুপারিশ! আবেদনকারী নিজে উপস্থিত না থাকায়; না মঞ্জুরের সুপারিশ! অথবা দলিল দাতার/গ্রহিতার বাবার/মায়ের নামের এক অক্ষর ভুল বা এ-কার নাই। আ-কার নাই বা ও-কার নাই, এইসব নিয়েও না মঞ্জুরের সুপারিশ! ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট ছয় থেকে এক বছরের পুরোনো হলেই তারা সরকারি নির্দেশনা দেখাবে যে- চলবে না, নিম্নতম তিন মাসের আপডেট লাগবে। সাধারণ পাবলিকের কাজে এরকম আপডেট কাগজ না থাকলেও নামজারি বাতিলের সুপারিশ করা হয়! অথচ, এমনও খারিজ ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে; যার ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট একদম জাল, ফুটপাত থেকে বানানো, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তা কোনো স্থানীয় চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়র কর্তৃক প্রদত্ত নয়! শুধু তাই নয়। ২০২৩ সালের নামজারিতে ২০১০ সালের হাতে লেখা সম্পূর্ণ এনালক পদ্ধতির ওয়ারিশিয়ান সার্টিফিকেট লাগিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দেওয়ার কূ-কীর্তির অভিযোগ শোনা যায় এসিল্যান্ড সাদিয়ার বিরুদ্ধে। সেবাপ্রার্থী লোকজনের মুখ থেকে জানা যায় ‘সাদিয়া এখানে আসছে শুধু টাকা কামাতে, এখান থেকে যা পারে কামিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও বদলি হয়ে যাবে’। একই কাগজ বা দলিল পর্চা দিয়ে আবেদনকৃত বহু নামজারি কেইস বাতিল হয়েছে শুধুমাত্র নির্ধারিত ঘুষের টাকা না দেওয়ার কারণে।
নির্ধারিত ফি পরিশোধে খারিজ ডেলিভারি নেওয়ার নজির আছে শত শত! তাদের সেই নির্ধারিত ফিস গ্রহণের জন্য আছে নিজস্ব জনবল ও গোপন হিসাবের খাতা। সে খাতা এবং নগদ টাকা জমা রাখেন সিন্ডিকেট বাহিনীর প্রধান হোতা কানুনগো হাবিবুর রহমান।
মূলত অফিসের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে হাবিবুর যাকে যেখানে যেভাবে সেটিং করে দিয়েছে, সে সেভাবেই তাদের সিন্ডিকেটের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। জনগণের কথা ভাবার মতো সময় তাদের নেই। এসি ল্যান্ড সাদিয়া সিন্ডিকেট, সেবা প্রত্যাশীদের জিম্মি করে সেবা প্রধানের নামে মিসকেস ও নামজারি জমা ভাগ কেস দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ ভূমি গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছি বিপুল পরিমাণ কালো টাকা এমনই অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে। সে জন্য নেজারত শাখায় ঢুকলেই দেখা যায় এখানে কেউ হয়তো কাজ করতে আসেনি, মনে হয় সবাই বিকাশ, রকেট ও নগদের ডিলারশীপ নিয়ে দিব্যি ব্যবসা করছেন। সার্ভেয়ার ও কানুনগো’র সাথে কাজ করা একজনের সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পুরো এসিল্যান্ড অফিসটাকে আঙ্গুলে তুলে নাচাচ্ছেন। আগেও সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল এসিল্যান্ড সাদিয়া তবুও বহাল তবিয়তে গাপটি মোড়ে বসে আছে কোতোয়ালী রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিসে।
অনুসন্ধানে চঞ্চল আরো তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায় টেবিলে বিভিন্ন কাজের রেট। জেনারেল কেসের জন্য ৫ হাজার, পার্ট ভিপির জন্য ১০ হাজার, এল এ কেসের জন্য ২০ হাজার, খ তালিকার জন্য ৩০ হাজার, ১/১ এর জন্য ৪০ হাজার, মিসকেসের জন্য প্রথম ফাইলেই দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। তাছাড়া প্রতি শুনানীতেও সাদিয়া সিন্ডিকেটকে চা পান করাতে দিতে হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। তাছাড়া রায় প্রদানে তো তাদের বিরিয়ানী খাওয়াতেই সেবাপ্রত্যাশিদের গুনতে হয় বিপুল পরিমান অর্থ। আবার ভূমির পরিমান বেশি হলে ঘুষখোর সাদিয়া সিন্ডিকেটের আপ্যায়ন খরচও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সেবাপ্রত্যাশিরা। তাদের ঔদ্ধোত্বপূর্ণ আচরণ ও অহমিকামূলক কথাবার্তায় বোঝা যায়; তিনি এসিল্যান্ড অফিসে রাজত্ব করতে এসেছে। লুট করতে এসেছে, শোষন করতে এসছে! তিনি কোনো পাবলিক সেবা দিতে আসেনি!