রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
এই শালা, এই শুয়োরের বাচ্চা তুই জানিসনে আমি যুবদলের নিতা, আমরা তো সরকারী জমি দখল করবোই। এতে তোদের কি? এখন যা ইচ্ছে তাই করবো, কি করবি সহ নানা অশ্লীল গালিগালাজ করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শামীম রেজা ও তার ভাই শোভন। তারা দুই ঘন্টা ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক চিত্র নামক পত্রিকার ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামকে আটকে রাখে। পরে তার মোবাইলে ধারনকৃত ছবি ও ভিডিও চিত্র মুছে ছেড়ে দেন। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার বিকেলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর বাজার সংলগ্ন মাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ গেটের সামনে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপির নাম ভাঙ্গয়ে একদল দূর্বত্ত সোনাপুর এলাকায় সরকারী জমি দখল করে পাকাস্থাপনা তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে সোনাপুর মাছ বাজারের পাশে জমি দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করছে শামিম ও শোভন। নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানাধীন জমিটির স্থানীয় বাজার মূল্য কোটি টাকা হলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলমন্ত্রীর পুত্র পরিচয়দানকারী বাদশা আলমগীর মাত্র ৩ হাজার টাকায় জমিটির (মৌজা সোনাপুর,দাগ নং (৯৮০) একসনা (১৪৩২-৩৩) লীজ দেন। আর এই লীজের জোরেই ওই জমিতে পাকা ঘর তৈরি করছে যুবদল নেতা শামিম ও শোভন।
শামীম ও শোভন দাম্ভোক্তির সাথে উচ্চস্বরে বলেন, আমরা যুবদল করি। বালিকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার আমাদের ঘর তোলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে কোন প্রকার লিখিত কাগজ দেখাতে পারেনি শামীম ও শোভন। তারপরও সরকারী জায়গায় পাকা স্থাপনা তৈরির বিষয়টি প্রশাসন জানলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে।
এ দিকে, বিষয়টি প্রকাশ্য আসার পর নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা শামীম রেজার সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, এমপি পুত্র মিতুল হাকিম, তার ভাই এহসানুল হাকিম সাধনের নির্বাচনী প্রচারণা ও আওয়ামী দলীয় কার্যক্রমের বেশ কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ব্যক্তি কিভাবে যুবদলের পদ পেলেন। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বলেন, ৩ হাজার টাকায় বাৎসরিক লীজ নিয়ে কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল চলছে। এক বছরের জন্য লীজ নিয়ে কি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা যায়। এ জমি আর ইউনিয়ন পরিষদ ফেরত পাবে না। লোক দেখানো ৩ হাজার নিলেও চেয়ারম্যান মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে জমি দখলের সুযোগ দিয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত পুর্বক আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীরের বিচার দাবী এবং হওয়ার কারণে সাধার মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, শুধু এ জমিই নয়, সোনাপুর কাঁচা বাজার সংলগ্ন ডাস্টবিনের জায়গা দখল, সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজের সামনে জায়গা দখল করে বিএনপির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন বোর্ড টাঙানো হয়েছে। একের পর এক জায়গা দখল করছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায়। এ কারণে প্রশাসনও ব্যবস্থা নিতে হিমসীম খাচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শামীম রেজার লীজের কাগজে গত ২১ এপ্রিল সোনাপুর মৌজার খাস জমির দাগ নং ৯৮০ দাগের অংশ ১৪৩২ হইতে ১৪৩৩ সাল পর্যন্ত বন্দোবস্ত ৩ হাজার টাকায় দেওয়া হলো উল্লেখ থাকলেও কত শতাংশ জমি লীজ দেওয়া হলো সেখানে উল্লেখ নেই। আর আদায়কারী হিসেবে চেয়ারম্যান বাদশা আলমগীর নিজেই স্বাক্ষর করেছেন।
এ বিষয়ে নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা আলমগীর বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের খাস জমি বাৎসরিক ৩ হাজার টাকায় লীজ প্রদান করা হয়েছে। তবে, পাকা স্থাপনা কিভাবে নির্মাণ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসানুল হক শিপন বলেন, জায়গাটি ইউনিয়ন পরিষদের। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সাথে আলাপ করুন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, জমিটি বাজারের নয়, এটা ইউনিয়ন পরিষদের জমি। সহকারী কমিশনার (ভুমি) কাগজপত্র দেখেছে। শামীম রেজা নামে একজনকে বাৎসরিক লীজ প্রদান করেছে। লীজের জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করার কোন সুযোগ নেই। চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।