চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামে প্রতারণা, জালজালিয়াতি ও ভুয়া ডকুমেন্টস ব্যবহার করে মানুষকে ফাঁসানোর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। মূল অভিযুক্ত ফিরোজ মিয়া জাল ডকুমেন্টস ও মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আলম মিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসিয়েছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও।
অভিযোগ রয়েছে, ফিরোজ মিয়া যোগসাজশে গোপনীয়ভাবে জাল স্বাক্ষর যুক্ত নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সতেরো লক্ষ বিশ হাজার টাকার ডিট ডকুমেন্টস তৈরি করেন। এ জাল ডকুমেন্টস ব্যবহার করে আলম মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মামলার কাগজপত্রে ফিরোজ মিয়া নিজের পিতা-মাতার নাম পরিবর্তন করেন। ডিটে থাকা স্বাক্ষীদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছেন যে, তারা জানতেনই না তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও এক ধাপ এগিয়ে এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যাংক। ডিট ডকুমেন্টসে জামানত হিসেবে উল্লেখ করা হয় একটি ব্যাংক একাউন্ট (নং ২৯০১৫২১৪২) এবং চেক (নং এসবি-০০০০০০১), যা ভুক্তভোগী আলম মিয়ার নামে রয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আলম মিয়া জানান, এধরনের কোনো একাউন্ট বা চেক সম্পর্কেই তিনি কিছু জানেন না।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানী টিম সরেজমিনে গেলে এনআরবি ব্যাংক, বন্দরটিলা শাখার কর্তৃপক্ষ জানান উল্লিখিত একাউন্ট নম্বরটি তাদের ব্যাংকে নেই। তবে চেক নম্বরটি সঠিক এবং সেটি একটি যৌথ একাউন্টের সাথে যুক্ত, যেখানে একাউন্ট হোল্ডার হিসেবে ফিরোজ মিয়া ও আলম মিয়ার নাম রয়েছে।
চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই যৌথ একাউন্ট খোলার সময় ভুক্তভোগী আলম মিয়া উপস্থিত ছিলেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ফিরোজ মিয়া একাই উপস্থিত হয়ে আলম মিয়ার নামীয় জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ও আলম মিয়ার উপস্থিতি বা স্বাক্ষর ছাড়াই খোলা হয় একাউন্টটি।
আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের যৌথ একাউন্ট খোলা সরাসরি ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘন। একজন একাউন্ট হোল্ডারের সরাসরি উপস্থিতি, স্বাক্ষর এবং শর্তসাপেক্ষ যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যৌথ একাউন্ট খোলা বৈধ নয়। এটি শুধু প্রতারণা নয়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও যোগসাজশেরও প্রমাণ বহন করে।
ভুক্তভোগী আলম মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন –
“শুধু মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়নি, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমেও আমাকে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এখন ব্যাংককে ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, শুধু প্রতারক ফিরোজ মিয়ার বিরুদ্ধেই নয়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ঘটনায় শুধু ফিরোজ মিয়া নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অপরাধমূলক যোগসাজশ, জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মামলা হওয়া উচিত। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এ ধরনের গাফিলতির কারণে প্রতারণা সংঘটিত হয়েছে, যা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত। বর্তমানে মামলা থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। ভুক্তভোগী পক্ষ ও স্থানীয়রা আশা করছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রতারণার আসল রহস্য উন্মোচিত হবে এবং প্রতারক ফিরোজ মিয়া সহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।